শিক্ষক দিবসে শিক্ষাগুরুকে ঘিরে কুবি শিক্ষার্থীদের ভাবনা

কুবি প্রতিনিধি:

দৈনন্দিন কার্যক্রম সম্পাদন করা থেকে শুরু করে পৃথিবীর সাথে নিজেকে খাপ খায়িয়ে নেয়ার জন্য মানুষ ব্যাতীত অন্যান্য প্রাণীদের সহজাত প্রবৃত্তিই যথেষ্ট। তারা প্রকৃতি থেকেই শিক্ষাগ্রহণ করে। তবে একজন মানুষের‚ মায়ের কোল থেকে শুরু করে কবর পর্যন্ত শিক্ষাগ্রহণ করে যেতে হয়। সমাজবন্ধ হয়ে চলার নিরিখে মানুষকে প্রথমে ভাষা শিখতে হয়‚ তার মায়ের কাছে। সেইসাথে সামাজীক জীবনের পরতে পরতে একজন মানুষকে বিভিন্য মাধ্যম হতে শিখতে হয়। প্লেটো-এরিস্টটলের ওরেটরি মাধ্যম থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমেও যিনি আমাদের জীবনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন তিনিই মহান শিক্ষাগুরু। এই মহান শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ প্রতি বছর ৫ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ পালন করা হয়। ১৯৯৫ সাল থেকে এটি পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি পালনে এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল ও তার সহযোগী ৪০১টি সদস্য সংগঠন মূল ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষক দিবসকে সম্মানের সাথে স্মরণ করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে লালমাই পাহাড়ের কোলঘেঁষা একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো—কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষক দিবসে তাদের মনের ভাবনা জানিয়েছেন কুবি শিক্ষার্থীরা।

‘নতুন বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাদানের পাশাপাশি নীতি ও নৈতিকতাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া উচিত’

আজ ৫ই অক্টোবর, বিশ্ব শিক্ষক দিবস। খুব সহজ ভাষায় ‘যিনি শেখান’ তিনি শিক্ষক আর যে ‘শেখে’ সে শিক্ষার্থী। শিক্ষকগণের শিখনের বিষয়বস্তুর কি কোনো পরিধি কিংবা সিলেবাস আছে? উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তবে কি তা বিভিন্ন দেশের সরকারকর্তৃক, শিক্ষা কমিশন কর্তৃক প্রণীত সিলেবাসের মধ্যেই আবদ্ধ? একজন শিক্ষক কে আমরা বাবার সাথে তুলনা করি শুধু সম্মানের প্রেক্ষিতে। তবে কেন এইভাবে ভাবি না যে- একজন বাবা কে যেমন তার সন্তান জন্মলগ্ন থেকে আচার-ব্যবহার অনুকরণ করে শিখে তেমন একজন শিক্ষক এর জীবনাচরণ ও শিক্ষার্থীর জন্য অনুকরণীয় হতে পারে? পরিতাপের বিষয় বিগত দশক এ আমরা শিক্ষকগণের থেকে প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়বস্তু আত্বস্থ করতে পারলেও নীতি-নৈতিকতার শিক্ষা কতটুকু শিখেছি তা স্বৈরাচার পতনের পরই ফুটে উঠে নতুন বাংলাদেশে, যখন দেখি শিক্ষক এর গলায় জুতার মালা কিংবা জোরপূর্বক পদত্যাগ, লাঞ্চনার শিকার তার সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকেই। এই অপমান, লাঞ্চনা কি শুধু শিক্ষার্থীদেরই দোষ হিসেবে বিবেচ্য হবে‚ নাকি শিক্ষকগণের ও নীতি-নৈতিকতার উপর অটল না থাকা এবং তাদের কে সেই শিক্ষাদানে ব্যার্থতার ফলস্বরুপ? নতুন বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাদানের পাশাপাশি নীতি ও নৈতিকতাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ যাতে আমাদের শিক্ষকগণ কাজী কাদের নেওয়াজ এর ভাষায় বলতে পারে-

“আজ হতে চির -উন্নত হলো শিক্ষাগুরুর শির
সত্যই তুমি মহান উদার বাদশা আলমগীর”

ফারুক আল নাহিয়ান (পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ)।

‘একজন শিক্ষক যতই খারাপ হোক না কেন‚ তিনি কখনো তার ছাত্রকে নিকৃষ্ট কিছু শিখাতে পারেন না’

শিক্ষাজীবনের শুরু থেকেই শিক্ষক নামক একটি শব্দ শুনে এসেছি। যাদের মূল্য কখনো আমি নির্ধারণ করার যোগ্যতা রাখি না। তবে শিক্ষক শব্দ এবং চরিত্র আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রেতভাবে জড়িত। হয়তো তাদের সাথে আমাদের কোন রক্ত সম্পর্ক নেই‚ কিন্তু এমন এক অভিভাবকে পরিণত হন আমাদের‚ যাদের একটি পরামর্শ আমাদের জীবন বদলে দেয়। মা বাবার পরেই তো শিক্ষকের স্থান। একজন শিক্ষক যতই খারাপ হোক না কেন‚ তিনি কখনো তার ছাত্রকে নিকৃষ্ট কিছু শিখাতে পারেন না। শিক্ষকরা আয়না স্বরূপ, যাদের মাধ্যমে আমরা নিজেদের চরিত্রকে বিচার করি। আসলে শিক্ষিত হওয়া মানেই স্বশিক্ষিত হওয়া নয়‚ একজন প্রকৃত শিক্ষকই আমাদেরকে স্বশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে সহায়তা করে। প্রাতিষ্ঠানিক দিক দিয়ে বিবেচনা করলে , আমাদের একটি নির্দিষ্ট লম্বা সময় শিক্ষকদেরকেই ঘিরে। তবে অনেক সময় দেখা যায় শিক্ষক নামের কিছু মানুষ খারাপ চরিত্রের হয়। তবে আমার মতে কোন শিক্ষকই খারাপ নয়। আর যে মানুষটি শিক্ষক রূপে খারাপ‚ সে আসলে কখনো শিক্ষক ছিল না‚ সে একটি মুখোশের আড়ালে নিজেকে শিক্ষক দাবি করেছে। শিক্ষকরা আসলে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক জীবনকেই ঘিরে নয়, তারা আমাদের প্রকৃত জ্ঞানটুকু দান করে, যার মাধ্যমে আমরা ভবিষ্যতে নিজেকে বিভিন্ন রূপে গড়ে তুলতে পারি।

মারুফ উর রহমান (আইন বিভাগ)।

‘শিক্ষকদের বেতনকেন্দ্রিক সংকট থেকে বেরিয়ে এসে তাদের সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে’

বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে প্রথমেই আমার বাবা ও শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের প্রতি সম্মান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বিশ্ব শিক্ষক দিবসে আমরা শিক্ষকদের অবদানকে স্বীকৃতি দিই এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তারা জাতির ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার কাজে নিরন্তর যুক্ত থাকেন। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শিক্ষকদের বেতনকেন্দ্রিক সমস্যা একটি দীর্ঘদিনের চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়েছে। শিক্ষকদের বেতন কেবল একটি আর্থিক বিষয় নয়, এটি শিক্ষার গুণগত মান, শিক্ষকদের মর্যাদা এবং শিক্ষা ব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নয়নের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। যথেষ্ট বেতন পেলে শিক্ষকরা তাদের পেশাকে পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারবেন এবং শিক্ষার্থীদের যথাযথ শিক্ষা দিতে সক্ষম হবেন। শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির হার খুবই ধীরগতির। সেইসাথে বাংলাদেশের অনেক শিক্ষকই অপ্রতুল বেতনে কাজ করেন। বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকরা। এই অপ্রতুল বেতনের কারণে তারা অন্য পেশায় যাওয়ার জন্য বাধ্য হন, যা শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি বড় ধরনের ক্ষতি। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে বেতন না বাড়ার কারণে শিক্ষকরা আর্থিক সংকটে পড়েন। পরিশেষে বলতে চাই, শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য সরকার ও সমাজের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া উচিত। এবং এই সমস্যার সমাধানের জন্য সরকার, শিক্ষাবিদ এবং সমাজের সকল স্তরের মানুষের যৌথ প্রচেষ্টা প্রয়োজন। শুধুমাত্র যোগ্য এবং প্রেরণাদায়ী শিক্ষকদের মাধ্যমেই আমরা একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়তে পারব।

মোহাম্মদ সিফাতুল্লাহ (ফার্মেসী বিভাগ)।

Sponsor

Daily Darpan

Contact for Sponsor

You cannot copy content of this page