জাহিদা সুলতানা রিমা, খুবি প্রতিনিধি:
প্রকৃতিতে ঋতুবদলের আয়োজন চলছে। শরৎ শেষে হেমন্তের আগমন, আর এরই সঙ্গে শীতের বার্তা নিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে নেমে এসেছে এক মনোমুগ্ধকর পরিবর্তন। প্রতিদিনের মতো ভোরে সূর্য উঠলে কুয়াশায় মোড়া ক্যাম্পাস এক অপার্থিব সৌন্দর্যে ভরে ওঠে। শিশির ভেজা ঘাসে পড়া সূর্যের লালচে আলো মুক্তোর মতো ঝলমল করে, যা প্রকৃতিকে এক মায়াবী আবেশে ঢেকে দেয়।
দিনের বেলা কিছুটা গরম থাকলেও রাতের দিকে হিমেল হাওয়া আর হালকা কুয়াশা শীতের আগমনী বার্তা দেয়। গভীর রাত থেকে ভোরের দিকে ক্রমশ ঠাণ্ডা বাড়ছে, যা প্রতিদিনের শীতল অনুভূতিকে আরও তীব্র করে তুলছে। ক্যাম্পাসের পিঠাপুলির দোকানগুলোতেও শুরু হয়েছে শীতের প্রস্তুতি, যা পরিবেশকে উৎসবমুখর করে তুলেছে।
আজ (২৩ অক্টোবর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, আবাসিক হল, একাডেমিক ভবন, লেকপাড় এবং ক্যাফেটেরিয়ার প্রতিটি স্থান কুয়াশায় ভিজে আরও মনোমুগ্ধকর হয়ে উঠেছে। গাছের পাতায় জমে থাকা শিশিরবিন্দু আর লেকের স্বচ্ছ পানিতে ফুটে থাকা লাল ও সাদা শাপলা শীতের নৈসর্গিক সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলেছে।
ভোরের সূর্যের আলো লেকের পানিতে প্রতিফলিত হয়ে সৃষ্টি করেছে এক মায়াবী পরিবেশ, যা শিক্ষার্থীদের প্রশান্তি দেয়। সকালে হাঁটতে আসা শিক্ষার্থীরা এই অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করতে বারবার ক্যাম্পাসের প্রান্তে এসে দাঁড়ায়। হালকা ঠাণ্ডা বাতাস তাদের মনকে শীতের আমেজে ভরিয়ে দেয়।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মিনহাজ হোসেন বলেন, “উত্তরের তুলনায় খুলনায় শীত একটু দেরিতে আসে, তবে হেমন্তের আগমনের সঙ্গে আমাদের ক্যাম্পাসেও শীতের স্পর্শ পাওয়া যাচ্ছে। এটি আমাদের ক্যাম্পাসকে এক অনন্য রূপে সজ্জিত করেছে। ইংরেজি বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী সুমাইয়া খান বলেন, “শীতের সময় ক্যাম্পাসে এক অন্যরকম আবহ তৈরি হয়। ভোরবেলা কুয়াশার চাদরে ঢাকা ক্যাম্পাস আর শিশির ভেজা ঘাসে হাঁটার আনন্দই আলাদা। মনে হয় প্রকৃতির কাছাকাছি চলে এসেছি।”
শীতের আগমনের সঙ্গে প্রতিবছরের মতো এবারও পাখিমেলা ও প্রজাপতি মেলার প্রস্তুতি চলছে। এই মেলাগুলো শিক্ষার্থীদের কাছে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে ধরা দেয়, যা ক্যাম্পাসের পরিবেশকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে।
ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ফুটে থাকা ছাতিম, গন্ধরাজ, শিউলি ও কামিনী ফুল হেমন্তের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও রঙিন করে তুলেছে। ছাতিম ফুলের মিষ্টি গন্ধ ক্যাম্পাসের বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে শিক্ষার্থী ও পথচারীদের মনকে মুগ্ধ করে তোলে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই মায়াবী পরিবেশ, কুয়াশায় মোড়া সকাল, আর শিশিরবিন্দুর সৌন্দর্য শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে এসেছে। এই শীতের আবেশ ক্যাম্পাসের প্রতিটি কোণকে স্বর্গীয় করে তুলেছে, যা ছাত্রছাত্রীদের মনকে প্রশান্তিতে ভরিয়ে দিচ্ছে।