গুচ্ছ পদ্ধতি নিয়ে কুবি শিক্ষার্থীদের ভাবনা

কুবি প্রতিনিধি:

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যাবস্থা অনুযায়ী একজন শিক্ষার্থী উচ্চমাধ্যমিকের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সীট সংখ্যা অপ্রতুল হওয়াতে তাদের একটি জটিল ভর্তি পরীক্ষা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এজন্য তাদের একটি দীর্ঘ প্রস্তুতির দরকার হয়। তাই বলা যায় যে ছোটখাটো পদ্ধতিগত ভুলও একজন শিক্ষার্থীর জীবনে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। এই কারনে দরকার স্বচ্ছ একটি নির্বাচন পদ্ধতি, সাজানো ভর্তি পরীক্ষা।

সাধারণ ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববদ্যালয়গুলোর একত্রে ভর্তি পরীক্ষাকে (GST) বা গুচ্ছ পদ্ধতি বলা হয়ে থাকে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই পরীক্ষা নিয়ে রয়েছে নানান মতামত। কেউ কেউ বলছেন যে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে কুবি গুচ্ছে থাকাটাই বাঞ্চনীয়। কেউ আবার উভয় পদ্ধতি নিয়েই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অপর পক্ষ স্বকীয়তা বজায় রেখে পরীক্ষা নিতে চাচ্ছেন। সেজন্য তারা বিভিন্ন সময় কুবি প্রশাসনকে চাপ প্রয়োগ করে আসছেন। সেইসাথে আলটিমেটাম দিয়ে প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার কথাও বলা হয়। গুচ্ছ পদ্ধতি নাকি স্বতন্ত্র পদ্ধতি‚ কোনটি ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়’ এবং ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কল্যানে সবচেয়ে বেশি কার্যকর হবে এ বিষয়ে ‘দৈনিক বিজয় বাংলাদেশ’ চার জন কুবি শিক্ষার্থীর সাথে আলাপ করলে ভিন্নধর্মী মতামত পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সাইমা আক্তার বলেন‚ ‘শিক্ষার্থীদের দিক থেকে চিন্তা করলে, গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতি বেশি সুবিধাজনক মনে হয়’ তিনি আরো বলেন‚ ‘আমি নিজেও গুচ্ছের মাধ্যমে পরীক্ষা দিয়েছি এবং এই পদ্ধতিতে আমার অভিজ্ঞতা বেশ ভালো হয়েছে। গুচ্ছ পদ্ধতিতে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা একসাথে দেওয়া যায়, ফলে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সমস্যা কমে। তাছাড়া পারিবারিক সীমাবদ্ধতার কারণে অনেকেই দূরে পরীক্ষা দিতে যেতে পারে না। গুচ্ছ পদ্ধতিতে একটি পরীক্ষার মাধ্যমেই একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া যায় এবং মাইগ্রেশনের মাধ্যমে পছন্দ ও সুবিধা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করা যায়। স্বতন্ত্র ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে এই সুবিধাগুলো পাওয়া সম্ভব নয়, তাই আমার মনে হয় শিক্ষার্থীদের স্বার্থে গুচ্ছ পদ্ধতি গ্রহণ করাই শ্রেয়।

লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী হাসান অন্তর‚ কুবির স্বকীয়তা বজায় রেখে নিজস্ব পদ্ধতিতে পরিক্ষা নেওয়ায় দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন‚ ‘আমরা সবাই জানি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ভর্তি পরিক্ষায় যাতায়াত এবং আবেদন ফি এর খরচ এর কথা বিবেচনা করে শিক্ষার্থীদের দাবীর প্রেক্ষিতে গুচ্ছ পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। আবার এখন গুচ্ছ পদ্ধতির দীর্ঘ সূত্রীতা এবং জটিলতা বিবেচনায় আবার নিজস্ব পদ্ধতিতে পরিক্ষা নেওয়ার দাবি উঠেছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব পদ্ধতিতে পরিক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত ও নেওয়া হয়েছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়েও নিজস্ব পদ্ধতিতে নেওয়ার চিন্তা করছে। একজন কুবিয়ান হিসেবে আমারও চাওয়া আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বকীয়তা বজায় রেখে নিজস্ব পদ্ধতিতে পরিক্ষা নেওয়া হোক। প্রথম সারির মেধাবীদের ফোকাস করার জন্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় তার সক্ষমতার জায়গায় নিজস্ব পদ্ধতিতে পরিক্ষা নেওয়া হোক।’

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী গাজ্জালি আহমেদ বলেন‚ ‘শুধু কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় নয় দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতির আওতায় আসুক’ ‘গুচ্ছ পদ্ধতিকে আরও দ্রুততর করতে পদক্ষেপ নেওয়া হোক। আবেদন ফি ও ভর্তি ফি কমানো হোক, বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর সেশনজট কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হোক, শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হোক, শিক্ষার্থী বান্ধব একটা পরিবেশ তৈরি করুক।’

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ও সমাজচিন্তক ইয়াসির আরাফাত বলেন‚ ‘স্বকীয়তা বজায় রাখা কিংবা আঞ্চলিকতা পরিহারের বিষয়গুলোর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে গুচ্ছ পদ্ধতি বাংলাদেশর প্রেক্ষিতে এখনও যথাযথ কার্যকর নয়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেকহোল্ডার হিসেবে কোন একটি সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে শিক্ষার্থীদের একতার বিকল্প নেই। তাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একতরফা কোন সিদ্ধান্তে আগাতে পারছেন না।

Sponsor

Daily Darpan

Contact for Sponsor

You cannot copy content of this page